নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দীর্ঘ অপেক্ষার পর শেষ হয়েছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পানি শোধনাগারের নির্মাণকাজ। এক বছরের স্থলে পাঁচ বছর সময় লাগলেও শোধনাগারটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় খুশি পৌরবাসী। তাদের আশা, এটি চালু হলে অন্তত আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি পেতে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, চুয়াডাঙ্গা একটি আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা। দীর্ঘদিন ধরেই এ জেলার মানুষকে আর্সেনিকের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা পৌরবাসীর জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে একটি শোধনাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া শোধনাগারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল পরের বছরই। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় নির্মাণকাজ শেষ করতে দেরি হয়। অবশেষ গত ৩০ জুন শোধনাগারটির অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
চুয়াডাঙ্গা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর পানি শোধনাগার নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই বছরই ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কলেজপাড়ায় এক একর জমিতে এর নির্মাণকাজ শুরু করে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৬৩০ টাকা। এ শোধনাগারের ধারণক্ষমতা ৩৫০ ঘনমিটার। এরই মধ্যে শোধনাগারটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন পাম্প চালানোর জন্য শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের অপেক্ষা। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই পূর্ণাঙ্গভাবে শোধনাগারটির কার্যক্রম শুরু হবে। নির্মাণকাজে দেরি হওয়ার প্রসঙ্গে এ প্রকৌশলী বলেন, এ ধরনের পানি শোধনাগারের নির্মাণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। বিশেষ করে পরিপূর্ণভাবে পানি শোধনের জন্য বেশ কয়েক ধরনের বালি প্রয়োজন হয়। মূলত প্রয়োজনীয় সব ধরনের বালি সংগ্রহ করতে গিয়েই দেরি হয়েছে। শোধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি প্রথমে পাম্পের মাধ্যমে তুলে ট্যাংকে রাখা হবে। সেখানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানির আয়রনের মাত্রা কমানো হবে। এর পরই ওই পানি চলে
যাবে ‘বালি পরিশোধন’ স্তরে। সেখানে পরিশোধিত পানি আরেকটি ট্যাংকে জমা হলে মেশানো হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্লোরিন মিশ্রণ। এর পরই বিশুদ্ধ পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে পৌরবাসীর কাছে সরবরাহ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আয়ুব আলী বিশ্বাস বলেন, এ শোধনাগার থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য তৃতীয় নগর উন্নয়ন পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ (সেক্টর) প্রকল্পের আওতায় বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪২ টাকা ব্যয়ে ৮ হাজার ৪৫০ মিটার পাইপলাইন স্থাপন, ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯১ টাকা ব্যয়ে ৬৮০ ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ ও ৪ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ টাকা ব্যয়ে ৬ হাজার ৪০০টি পানির মিটার স্থাপন। চলমান এসব কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হবে। এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ময়নুদ্দিন বলেন, পৌরসভার পানি শোধনাগারটিতে ১১ হাজার ভোল্টেজের সংযোগ দেয়া হবে।
কুষ্টিয়া বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশনা পেলেই দ্রুত এ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রূপছায়া সিনেমা হলপাড়ার বাসিন্দা চিকিৎসক বেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা এতদিন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও ব্যবহার করে আসছি। অথচ আর্সেনিক নীরব ঘাতক। মূলত উপায় না থাকার কারণেই আমাদের বাধ্য হয়ে এ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পৌর এলাকার পানি শোধনাগারটি চালু হলে আমরা পানিবাহিত রোগের হাত থেকে রক্ষা পাব। এ ওয়ার্ডের গুলশানপাড়ার বাসিন্দা সহকারী অধ্যাপক পারভীন সুলতানা বলেন, পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কথা জেনে ভালো লাগল। আমরা দীর্ঘদিন নিরুপায় হয়ে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছিলাম। একই কথা জানান ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ইন্সপেক্টর এমএম আলাউদ্দিনও। তিনি বলেন, পৌরসভা বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করলে বহুদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, চুয়াডাঙ্গা একটি আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা। এ জেলার পানিতে আর্সেনিকের পাশাপাশি প্রচুর আয়রন থাকায় জনসাধারণের খুবই সমস্যা হচ্ছে। পানি শোধনাগারটি চালু হলে অন্তত পৌরবাসীকে নির্বিঘ্নে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।