শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :
নবীনগরে মসজিদে জিলাপি বিতরণ নিয়ে খুন নাটুদাহ চন্দ্রবাসের সাংবাদিক সালামকে নিয়ে প্রতিপক্ষের গভীর ষড়যন্ত্র:থানায় জিডির প্রস্তুতি নাটুদাহের চন্দ্রবাসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মারধর করে আহত করার ঘটনায় সাংবাদিক পুলিশ ম্যানেজের নাম করে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুঞ্জন এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলায় ভালুকার ইউপি সদস্য আহত পিরোজপুরে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে চিকিৎসক গ্রেপ্তার অনিয়মের অভিযোগে আক্কেলপুর থানার ওসি প্রত্যাহার ময়মনসিংহ জেলা যুব শ্রমিকলীগের বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী পালন বেগমগঞ্জে সিএনজি ড্রাইভারকে পিটিয়ে হত্যা আলমডাঙ্গার রেলষ্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পীচ করণ কাজের উদ্বোধন করলেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব হাসান কাদির গনু মিয়া আলমডাঙ্গা পৌর সভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলীর চোখের অপারেশন,ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা 

মায়ের করোনা পরীক্ষা তো হলোই না, উল্টো মার খেলেন ছেলে

Reporter Name / ২৭ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০, ০৮:১৪ অপরাহ্ন

জাগো দেশ ডেস্কঃ মায়ের করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজধানীর মুগদার দক্ষিণ মান্ডা এলাকার বাসিন্দা শাওন হোসেন। ভোর পাঁচটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও পরীক্ষা করানোর অনুমতি পাননি। এ নিয়ে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে তার বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা তার কলার ধরে হাসপাতালের ক্যাম্পে নিয়ে যান। এই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে আনসার সদস্যরা লাঞ্ছিত করেন দুই ফটো সাংবাদিককে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় এই ঘটনা ঘটে। আনসার সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার শাওন হোসেন জানিয়েছেন তার মা ক্যানসার রোগী। কেমোথেরাপি দিতে হলে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। লাইনের ক্রম অনুযায়ী তার আজই পরীক্ষা করানোর কথা। অথচ অসুস্থ মাকে নিয়ে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও তাকে না করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় হামলার শিকার দুই ফটোসাংবাদিক হলেন দেশ রূপান্তরের রুবেল রশীদ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের জয়িতা রায়। আনসার সদস্যদের হামলায় রুবেল রশীদের ক্যামেরার লেন্সের ফিল্টার ভেঙে গেছে। ভুক্তভোগী শাওন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত দুবার মুগদা হাসপাতাল থেকেই করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করিয়ে তিনি মাকে কেমোথেরাপি দিয়েছেন। গত ২০ জুন তৃতীয়বারের মতো বুথে পরীক্ষা করান। কিন্তু সময়মতো ফল না পেয়ে ২৩ জুন তিনি অভিযোগ বক্সে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। তারপরও ফল না পাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী ২৬ জুন তিনি নোটিশ বোর্ডে নোটিশ দিয়ে যান। পরদিন হাসপাতালে গিয়ে আবারও নোটিশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হলে বৃহস্পতিবার পুনরায় তার মাকে পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতাল থেকে বলা হয়। শাওন হোসেন বলেন, করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালের সামনে দুটি লাইন থাকে। একটি লাইন যারা বিনা মূল্যে বুথে পরীক্ষা করাবেন তাদের। অন্যটি যারা ২০০ টাকা দিয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা করাবেন তাদের। মাকে নিয়ে তিনি ভোর পাঁচটায় হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর লাইনে দাঁড়ান। লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা নিজেরাই একটি ক্রম করেন। সেই অনুযায়ী তার ক্রম ছিল ৩৬ নম্বরে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে নয়টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা পরীক্ষার জন্য টোকেন দেওয়া শুরু করে। প্রথমে যারা বিনা মূল্যে বুথে পরীক্ষা করাবেন তাদের টোকেন দেওয়া হয়। এরপর হাসপাতালে যারা পরীক্ষা করাবেন তাদের টোকেন দেওয়া শুরু হয়। আনসার সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার শাওন হোসেন বলেন, লাইনে অপেক্ষমাণরা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে টোকেন সংগ্রহ করেন সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আনসার সদস্যদের। কিন্তু তারা কিছুই না করে ফটকে বসেছিলেন। তখন তিনি সবার সঙ্গে কথা বলে দায়িত্ব নিয়ে একজন একজন করে টোকেন সংগ্রহ করার জন্য পাঠাচ্ছিলেন। ৩৩তম ব্যক্তি যাওয়ার পরই যারা টোকেন দিচ্ছিলেন তারা আর টোকেন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী অন্তত ৪০ জনকে তাদের টোকেন দেওয়ার কথা। তার ক্যানসার আক্রান্ত মা ৩৬ নম্বরে দাঁড়িয়েছিলেন। শাওন বলেন, টোকেন না দেওয়ার কারণ জানতে তিনি এগিয়ে যান। যারা টোকেন দিচ্ছিলেন তারা কোনো জবাব না দিয়েই সেখান থেকে চলে যান। তখন আনসার সদস্যদের কাছে তিনি কারণ জানতে চান। তাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তার কলার ধরে ভেতরের আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে লাঠি দিয়ে দুটি বাড়ি দেওয়া হয়। একজন আনসার সদস্য তার হাত বাধার জন্য রশিও নিয়ে আসেন। পরে মুগদা থানা থেকে পুলিশ আসেন। তারাও ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করেন। শেষমেশ তার পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে যান। এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলার জন্যও শাসানো হয় তাকে।

ফটো সাংবাদিক জয়িতা রায় সাংবাদিকক বলেন, সকাল সাড়ে দশটায় তিনি মুগদা হাসপাতালে পৌঁছেই আনসার সদস্যদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে দেখতে পান। তখন ছবি তুলতে গেলে একজন আনসার তেড়ে আসেন। তাকে চড় মারতে উদ্যম হন। তিনি কোনোরকম সরে পড়লে চড়টি তার গায়ে লাগেনি। তার এই পরিস্থিতি দেখে এগিয়ে আসেন ফটোসাংবাদিক রুবেল রশীদ। রুবেল রশীদ জানান, শাওন হোসেনকে কলার ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন আনসার সদস্যরা। সেই ছবি তুলতে গেলে এক আনসার সদস্য তাকে মারতে উদ্যত হন। এ সময় একটি চড় ক্যামেরায় লাগলে লেন্সের প্রটেক্টর ভেঙে যায়। এ সময় আনসার সদস্যরা খুব বাজে আচরণ করছিলেন বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের তোলা ছবি থেকে দেখা যায় দুজন আনসার সদস্য সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে মায়ের করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করাতে না পারা ছেলেটির কলার ধরে টানা হেচড়া করছেন। পেছন পেছন তার মা হেঁটে যাচ্ছেন। এদের একজন আনসার সদস্য আফসারুল আমিন ফটোসংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দিচ্ছিলেন। তবে লাঞ্ছিত দুই ফটোসাংবাদিক জানিয়েছেন সেখানে আরও কয়েকজন আনসার সদস্য ছিলেন যারা খুব বাজে আচরণ করছিলেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মুগদা জেনারেল হাসপাতাল আনসার ক্যাম্পের সহকারী কমান্ডার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা করাতে না পেরে ছেলেটি (ভুক্তভোগী শাওন হোসেন) তাদের সঙ্গে অকথ্য ভাষায় কথা বলছিলেন। তখন সেখানে উপস্থিত একটি সংস্থার সাদা পোশাকের সদস্য ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্যাম্পে নিয়ে যেতে বলেন। তারা সেই কাজটিই করেছেন। পরে মুগদা থানার একজন উপপরিদর্শক এসে ছেলেটির নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে যান। ছেলেটিকে কোনো মারধর করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। মুগদা হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার টোকেন দেওয়ার বিষয়টি তদারকি করেন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার অনিমেষ। একটি সূত্র থেকে তার মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তার সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা বুথ এবং হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর জন্য মোট ৫০ জন করে ১০০ জনকে টোকেন দিয়েছেন। সে হিসেবে লাইনের ৩৬ নম্বর যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তারা অবশ্যই পরীক্ষা করাতে পারার কথা। তার দাবি, ক্যানসার আক্রান্ত কোনো রোগী থাকলে তার কাগজপত্র দেখে সবার আগে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেন তারা। তবে আনসার ক্যাম্পের সহকারী কমান্ডার রফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব সময়ই জরুরি প্রয়োজনের অজুহাতে পরীক্ষা করানোর কিছু টোকেন তাদের হাতে রেখে দেয়। আগে এই সংখ্যাটি ছিল ১৪-১৫ টি। এখন ৬-৭ টি রেখে দেওয়া হয়। আর লাইনে দাঁড়ানো মানুষজন তাদের ওপর চড়াও হন। মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, অকথ্য ভাষায় কথা বলায় আনসার সদস্যরা একটি ছেলেকে টানাহেঁচড়া করেছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে কোনো সাংবাদিককে মারধর করা হয়নি। গালমন্দ করে থাকতে পারেন। তবে এ নিয়ে কেউ তার কাছে কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর