যশোর প্রতিনিধিঃ চৌগাছায় সন্তানকে জিম্মি করে স্বামীকে দিয়ে এক গৃহবধূর চুল কাটতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে এক বাড়িওয়ালি ও তার মেয়েদের বিরুদ্ধে। পরকীয়া ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির অপবাদ দিয়ে মারপিটের পর ওই নারীর চুল কাটতে বাধ্য করা হয়েছে। আহত ওই নারী ও তার শিশু সন্তানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় মামলা করায় পুলিশ অভিযুক্ত তিন নারীকে আটক করা হয়েছে।আটককৃতরা হলেন- বাড়ির মালিক জাফর ইমামের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া (৪৫) ও তার দুই মেয়ে জান্নাতারা ইমাম (২৪) ও সুমাইয়া ফারজানা (২০)।নির্যাতিতা নারীর স্বামী ইউনূছ আলী দপ্তরীর এজহারে উল্লেখ করেছেন, গত প্রায় ৮ মাস ধরে তিনি তার স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে (৪) নিয়ে চৌগাছা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কারিগরপাড়া গ্রামের জাফর ইমামের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। গত ২৬ জানুয়ারি তিনি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে রেখে গ্রামের বাড়ি অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামে যান। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ির মালিকের মেয়ে সুমাইয়া ফারজানা মোবাইল ফোনে জানায় তার স্ত্রী তাদের
বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে পালিয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারী ভাড়া বাড়িতে এসে ভাড়াটিয়াদের সাথে নিয়ে স্ত্রীকে খুঁজে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় একটি মামলা হয় এবং পুলিশ তার স্ত্রীকে আদালতে পাঠায়। সেখান থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বুধবার তারা ভাড়া বাড়িতে যান। এদিন রাত ১২টার দিকে ভাড়াটিয়ার স্ত্রী ও দুই মেয়ে তাদের শোবার ঘরে গিয়ে ঝগড়া শুরু করে। একপর্যায়ে তারা তার স্ত্রী বেদম মারপিট করে। এসময় তার শিশু কন্যা কান্নাকাটি করলে জান্নাতারা ইমাম তার গলা টিপে ধরে এবং ঘরের চৌকির সাথে আঘাত করে। তারা এসময় বলে, ‘হয় তোর স্ত্রীকে স্বর্ণ দিতে বল, না হলে এখনি তার মাথার চুল কেটে (ন্যাড়া) করে দিবি।’ লিখিত অভিযোগে ইউনুস আলী আরো উল্লখ করেন, তিনি চুল কাটতে অস্বীকার করলে তারা তার শিশু কন্যাকে নিয়ে দোতলার দিকে উঠে যায় ও মারপিট করতে থাকে। এ সময় মেয়ের কান্না ও স্ত্রীর আর্তচিৎকার সহ্য করতে না পেরে তিনি মেয়েকে তার কাছে নিয়ে আসতে বলেন এবং স্ত্রীর চুল কাটতে সম্মতি দেন। এরপর অভিযুক্তরা তার হাতে একটি কাচি (কাইচি) দিয়ে স্ত্রীর চুল কেটে দিতে বাধ্য করে। চুল কেটে দেয়ার পরও তারা
কোদালের আছাড় দিয়ে ইউনুস আলী, তার শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে মারপিট করে। পরে তাদের আর্তচিৎকারে পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর বাসিন্দারা এসে তাদের উদ্ধার
করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে নির্যাতিতা নারীটি অভিযোগ করেছেন, তার সিজারিয়ান অপারেশনের জায়গা, মাথাসহ শরীরের গোপন স্থানেও গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। হাসপাতালে নার্সরা তার শরীরের সারা গায়েই আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন।চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নারীটির সমস্ত শরীরে নির্যাতন করেছে বাড়ির মহিলারা। বাচ্চাটিকেও নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি বলেন এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্ত তিন নারীকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।