নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রেম করে বিয়ে। স্ত্রী ছেলে সন্তান জন্ম দেয়ার পর তাদের দু’জনকেই অস্বীকার করেন ইসলাম। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে ডিএনএ টেস্টও জানিয়ে দেয় সন্তান তারই।কিন্তু, এরপরও স্ত্রী-সন্তানের মর্যাদা দিতে রাজি হননি ইসলাম।এ ঘটনায় মামলা হলে ২০০১ সালে (এখন থেকে ১৮ বছর আগে) আদালত তাকে যাবজ্জীবন দেন। দেড় যুগ আইনি লড়াইয়ের পর স্ত্রীর মর্যাদা পেলেন ঝিনাইদহের মালা। আর সন্তানের মর্যাদা পেলেন মিলন। আদালতের নির্দেশে গত বুধবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ইসলাম ও মালার দ্বিতীয় দফায় বিয়ে সম্পন্ন হয়। ইসলাম ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দি। আর মালার বাড়িও একই গ্রামে।মালাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে দ্বিতীয় দফায় বিয়ে করায় হাইকোর্ট ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেছেন। তিনি এখন মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুণছেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন,যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ইসলাম আদালতে জামিন আবেদন।করেন। আদালত মালাকে স্ত্রী ও মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দেয়ার শর্ত দেন। আদালতের শর্তে ইসলাম রাজি হন। তিনি বলেন, ‘এরপর আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বুধবার কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দুই পক্ষের স্বজন এবং তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে হয়। বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দেন। এরপরই আদালত ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেন।’তবে এখনো কারাগারে আদেশের কপি আসেনি। কপি পেলেই মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান জেলার আবু তালেব।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মেয়ে মালার সঙ্গে একই গ্রামের ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা বিয়ে করেন। পরবর্তীতে মালা গর্ভবতী হন। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম হয় ছেলে মিলনের। এরপর মালার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন ইসলাম। ছেলের পিতৃত্বের পরিচয়ও দিতে অস্বীকৃতি জানান।এ ঘটনায় মালার বাবা ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন।এই মামলায় বিচারিক আদালত ইসলামকে যাবজ্জীবন দেন। আপিল করলে হাইকোর্টও একই রায় বহাল থাকে। চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল এবং রিভিউ আপিলেও একই সাজা বহাল থাকে। সম্প্রতি ইসলামের করা রিভিউ শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন। আপিল বিভাগকে তিনি বলেন, ‘মালা ইসলামের স্ত্রী। আর মিলন যে ইসলামের সন্তান, সেটি হাইকোর্টের আদেশের পর ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত।’ এরপরই গত বুধবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মালা- ইসলামের মধ্যে পুনরায় বিয়ে হয়। সেখানে বিয়ের রেজিস্ট্রি (কাবিনও) হয়। এরপর আপিল বিভাগ ইসলামকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।