নিজস্ব প্রতিনিধি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য নিরলশ ভাবে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সব রকম চাহিদা পুরণ করে চলেছেন। বর্তমান এই করোনার মহামারির ভেতরও তিনি স্বাস্থ্য খাতে যেভাবে বরাদ্দ দিয়ে চলেছেন বিশ্ববাসির কাছে তিনি এক রোল মডেল হিসাবে পরিচিতি অর্জণ করেছেন। এই মহামারী করোনা ভাইরাসের ভেতর সবাই যখন ঘরবন্দি ঠিক তখনই চুয়াডাঙ্গার স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ওষুধের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মস্বাত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে গত ২৮ জুন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেসহ চার উপজেলার সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওষুধ নিয়ে গড়মিলের ঘটনায় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে এবং বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার। গতকাল সোমবার দিনভর সদর হাসপাতালের সকল ওয়ার্ডের মেডিসিন সরবরাহের রেজিষ্টার খাতা ঠিক করতে নেয়া হয়েছে স্টোর কিপারের কাছে। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গার বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকের ওষুধ না দিয়ে বিল ভাউচার স্বাক্ষর করা নিয়েও চলছে রশি টানাটানি। দিনভর এমন গুঞ্জনের পর আলমডাঙ্গা, জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ওষুধের গড়মিল নিয়েও সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালচনার ঝড় বইছে। ওষুধ না দিয়েও বিলের কাগজ ঠিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ গোটা এলাকায়। তাছাড়াও স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিকের নামে নানা রকম কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীর। এ যেন মাছ না পেয়ে ছিপে কামড় দেয়ার মতো অবস্থা। ভেসে আসা গুঞ্জন ও আলাপ-আলোচনায় প্রকাশ, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ চার উপজেলার জন্য আসবাবপত্র, সার্জিক্যাল মালামাল এবং ওষুধসহ ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মালামাল কেনার কথা ছিলো। কিন্তু আলোচনায় উঠে আসছে এর মধ্যে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মালামাল কিনলেও সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওষুধ আসেনি। গত সপ্তাহে ৬ কোটি টাকার মালামালসহ ওষুধ আসলেও সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওষুধ নাকি আসেইনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোকাল ভাবে ওষুধ কেনার জন্য চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন অফিসে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ আসে। বরাদ্দকৃত ওষুধ ঠিকাদারের মাধ্যমে কেনা হয়। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওষুধ আসেনা। চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীরকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন। সেই বোর্ডের মাধ্যমে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওষুধ বুঝে পেয়েছে এই মর্মে বোর্ড কতৃপক্ষ বিল পাস করেন। ওই বোর্ড ঠিকাদারকে বিল পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তড়িঘড়ি করে হিসাবরক্ষক অফিসে পাঠায়। তড়িঘড়ি করে পাঠানোর একটাই কারন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই বিল পাস করতে হবে। এ বিষয়টি এক কান দু’কান করে সদর হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাড়ে ৪ কোটি টাকার বিষয়টি হাসপাতাল এলাকায় আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সুশিল সমাজ ও সাংবাদিকবৃন্দদের মাঝে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। এঘটনা চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান তাদের অনিয়ম গুলো ঢাকতে গতকাল দিনভর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীর অনিয়মের ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের প্রতিটা ওয়ার্ডেও মেডিসিনের রেজিষ্টার খাতা ঠিক করার জন্য গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। শুধু তাইনা, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিকের নামে বিভিন্ন কুৎসা রটানোসহ তাকে মামলার হুমকি পর্যন্ত দেখাচ্ছেন। অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করলেই তিনি প্রায় বিভিন্ন সাংবাদিকের নামে মামলার হুমকি দেন বলে অনেক সাংবাদিক এ ধরনের মন্তব্য করেন। এ যেন মাছ না পেয়ে ছিপে কামড় দেয়ার মতো অবস্থা প্রায়।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গার বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকে প্যারাসিটামল ও হিস্টাসিন ছাড়া গত ৫ মাস যাবত কোন ওষুধ সেখানে নেই। ওষুধের জন্য ৫ মাস আগে চাহিদাপত্র দেয়া থাকলেও এখনও পর্যন্ত কোন ওষুধ পায়নি তারা। বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকের জন্য ১৩ লাখ টাকার বরাদ্দ আসলেও ওই টাকা দিয়ে এখনও কোন ওষুধ কেনা হয়নি। গতকাল সোমবার বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকের জন্য ওষুধ না কিনে বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করা নিয়ে সিনিয়ার এক কনসালটেন্টকে রাজি করানো সম্ভব হয়নি। বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকের ওষুধের বিলে স্বাক্ষর করতে গেলে গতকাল ওই কনসালটেন্ট বলেন ওষুধ না দেখে তিনি ওই বিলে স্বাক্ষর করবেন না।
গোপণ একটি সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওষুধ, আবসাবপত্র ও সার্জিক্যাল জিনিসপত্র কেনার জন্য প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার বরাদ্দ আসে। ওই সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই বরাদ্দকৃত টাকার ওষুধসহ অন্যান্য মালামাল কেউ আংশিক পেয়েছে আবার কারও কথায় পওয়া গেছে গড়মিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার জহুরুল হকের মুঠো ফোনে কল করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওষুধসহ অন্যান্য মালামাল এসছে কিনা সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. হাদি জিয়াউদ্দিন আহম্মেদের মুঠো ফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করনেনি। সেকারনে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ওষুধসহ অল্পকিছু মালামাল পেয়েছি। বাকি সবকিছু আগামী মাসের কোন এক সময় দেয়ার কথা আছে। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার শামসুল হকের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রায় ৫৮ লাখ টাকার মালামাল পেয়েছি।
এ ব্যাপারে গতকাল মোসবার রাতে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসানের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তিনার ফোনে এসএমএস করলেও তিনি কল ব্যাক করেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুশিল সমাজের প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আসলে আমাদের সর্বঙ্গেই ঘাঁ। এইসব অনিয়ম দুর করতে হলে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে দোষি স্বাব্যস্ত হলে তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত। মানুষের জীবনরক্ষাকারী হিসাবে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সেই ওষুধ নিয়ে যদি কোন অনিয়ম হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।