শামীম আহমেদ, বরিশাল প্রতিবেদকঃ বরিশালের উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত গরিবের ডাক্তার নামে পরিচিত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা
কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী ও ডা. নাদিরা পারভিন দম্পতি মানুষের কল্যাণে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে করোনা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। উজিরপুর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে তারা রোগীদের পরম স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে চিকিৎসা প্রদান করার মাধ্যমে করোনা রোগীদের সুস্থ করে তুলছেন। দেশে মহামারী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব পড়ার প্রথম থেকেই তারা ভয়কে জয় করে এই চিকিৎসক দম্পতি একটানা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। অনেকে যখন করোনাভাইরাস সন্দেহে রোগীর দেহ
থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে ভয় পেত, সে সময় ডা. শওকত আলী একাই নির্ভয়ে রোগীর সেম্পল নিয়ে টেস্ট করতে পাঠাতেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে একথা শোনার পর অনেক ক্ষেত্রে স্বজনেরাও দূরে সরে যাচ্ছেন। চারদিকে যখন এমন ঘটনা ঘটছে, সেই মুহূর্তে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন এই চিকিৎসক দম্পতি। জ্বর, সর্দি, কাশি শ্বাসকষ্টের মতো করোনাভাইরাসে উপসর্গ থাকা রোগীদের কাছে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন ডাক্তার শওকত আলী। উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ছয়জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। দুইজন করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুইজন করোনা ইউনিটের আইসোলেশন কর্নারে চিকিৎসাধীন আছেন। এ বিষয়ে মুঠোফোনে ডা. শওকত আলী জানান, আট বছর পর কন্যা সন্তানের জনক-জননী হয়েছেন তারা। ফুটফুটে মেয়েটির বয়স এখন মাত্র ১৫ মাস। দুধের শিশুটির নাম রিদামনি। মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে কিছু সময় দুধের শিশুকেও ত্যাগ করতে হয় তাদেরকে। ডা. শওকত আলী জানান, নিয়ম অনুযায়ী একজন চিকিৎসক ১০ দিন চিকিৎসা সেবা প্রদানের পরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। পরিবারের সঙ্গে ৬ দিন থাকতে পারে। তবে আমার বেলায় তা সম্ভব হয়ে উঠেনি কারণ নিয়ম ভেঙেই
দুইজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে টানা ২১ দিন চিকিৎসা সেবা দিয়েছি।
তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। এখন এক রোগীকে টানা ১২ দিন পর্যন্ত করোনা ইউনিটে সেবা প্রদান করছি। আমার সহধর্মীণী ডা. নাদিরা পারভিনকে ছুটি নিয়ে একমাত্র দুধের শিশুর পাশে থাকতে
বলি। সে বলে, দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাবে। হাসপাতাল ছেড়ে ছুটিতে যাবো না। ডা. নাদিয়া পারভিন জানান, দেশের কল্যাণে মানবতার সেবক হয়ে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। দুইজনে এক সঙ্গে মানবতার সেবা করবো বেঁচে থাকি যতদিন ইনশাআল্লাহ।