অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, উজলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার করান শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ছাত্রীরা আঙিনা পরিষ্কারের পর আবর্জনাগুলো একটি স্থানে স্তূপ করে রাখে। এ সময় শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সিন্থিয়ার (৮) হাতে ম্যাচ
তুলে দিয়ে অফিসে আলাপচারিতায় মত্ত হন। শিশু সিন্থিয়া আবর্জনার স্তূপে আগুন দিতে গিয়ে তার পোশাকে আগুন লেগে যায়। মারাত্মকভাবে সে দগ্ধ হয়। কিন্তু বিষয়টি গোপন করতে চান প্রধান শিক্ষক রিজিয়া খাতুন। তিনি দগ্ধ ছাত্রীকে পরিবারের কাছে দিয়ে ক্লিনিকে নিতে বলেন। কিন্তু একজন শিক্ষকও তার সঙ্গে না পাঠানো হলে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হন। সিন্থিয়ার দরিদ্র পরিবার তাকে দর্শনার একটি ক্লিনিকে নেয়। সেখান থেকে তাকে ফেরত দেয়া হলে বৃহস্পতিবার
রাতে ভর্তি করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সিন্থিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, সিন্থিয়ার এমন করুণ অবস্থা হলেও শিক্ষকরা কেউ একটিবার খোঁজও নেননি। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, সিন্থিয়ার নিম্নাঙ্গের সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা ভালো নয়। এ কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিজিয়া খাতুন জানান, আবর্জনার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দিতে বললে ওই ছাত্রী আগুনে দগ্ধ হয়। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো সামান্য পুড়েছে তাই সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাইনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান কামাল জানান, এত বড় একটি ঘটনা প্রধান শিক্ষক আমাকে সঙ্গে সঙ্গে অবহিত করেননি। আমাকে জানানো হয়েছে রাত ১০টার দিকে। আমি খোঁজ নিয়েছি, মেয়েটির পরিবার এতটাই অসচ্ছল যে, চিকিৎসার টাকা জোগাড় তাদের জন্য কঠিন। আমরা তার চিকিৎসার ব্যয় জোগান দেয়ার জন্য শনিবার বসব। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের দায়িত্বহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। শুক্রবার দুপুরে আমরা সদর হাসপাতালে গিয়ে শিশু ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য কিছু টাকাসহ ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। তার চিকিৎসার জন্য আমাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। শনিবার বিষয়টি একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার তদন্ত করবেন। তদন্তে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।