themesbaz_sky_19
ঘোষনা :
জাগোদেশ২৪ ডটকমে আপনাকে স্বাগতম , সর্বশেষ সংবাদ জানতে জাগোদেশ২৪ ডটকমের সাথে থাকুন । জাগোদেশ২৪ডটকমের জন্য  সকল জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে।  আগ্রহী প্রার্থীগণ জীবন বৃত্তান্ত, পাসপোর্ট সাইজের ১কপি ছবি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রসহ ই-মেইল পাঠাতে পারেন। ই-মেইল:
পুরাতন খবর খুজছেন ?

জীবননগর ও দর্শনা হানাদার মুক্ত দিবস আজ

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ১০ বার নিউজটি পড়া হয়েছে

শিমুল রেজা, জাগো দেশ প্রতিবেদনঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি স্মরণীয় দিন। ইতিহাসের পাতায় চিরদিন বাঙারি জাতির হৃদয় ও মনে গেঁথে থাকবে চিরন্তন। এই দিন জীবননগর উপজেলা ও দামুড়হুদা উপজেলার অন্তর্গত দর্শনা হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলা চূড়ান্তভাবে হানাদারমুক্ত হয়। এ দিন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর তুমূল প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনী জীবননগর ছেড়ে পালিয়ে যায়।এ দিনই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখে পাকবাহিনীর সঙ্গে তুমূল লড়াইয়ের মাধ্যমে দর্শনাকেও হানাদারমুক্ত করা হয়।

জীবননগর মুক্ত দিবস প্রসঙ্গে জীবননগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নিজামউদ্দিন জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর জীবননগরে পাকহানাদার বাহিনীর পতন ঘটলেও চূড়ান্ত বিজয় আসে ৪ ডিসেম্বর। এ দিন ভোরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মেজর দত্ত ও মেজর বর্মা এবং ৮নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার পরবর্তীতে সেনাবাহিনী প্রধান প্রয়াত জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে জীবননগরের
মাধবখালী সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে উথলী আখ সেন্টার ও হাসাদাহের আমবাগানে অবস্থানকৃত পাকবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যায়। এর আগে ২৬ নভেম্বর জীবননগর থানাভবন মুক্ত করে জীবননগরে বেসামরিক প্রশাসন চালু করা হয়। সেই সময় হাবিবুর রসুলকে প্রশাসক ও মজিবর রহমানকে থানা ইনচার্জ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। জীবননগর থানা মুক্ত করার পর মুক্তিযোদ্ধা-জনতা থানায় ফেলে যাওয়া পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন মুনছুর আলীর ব্যবহৃত জিপগাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর থানার মালখানা থেকে উদ্ধার করা হয় পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা অজ্ঞাতনামা ৭-৮ যুবতীর লাশ। এ দিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিপাগল মুক্তিযোদ্ধা-জনতা জীবননগরের মাটিতে প্রথম উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলার পতাকা।

এদিকে, দর্শনা মুক্ত দিবসের বর্ণনা দিতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেন জানান, ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বারাদী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর আসে দর্শনার উত্তর-পশ্চিম পাশে পাকহানাদার বাহিনী বাংকার করে অবস্থান নিয়েছে। এ খবর পেয়ে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ৬-৭শ সদস্য ও ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা রাতের খাবার খেয়ে পায়ে হেঁটে মদনা, প্রতাপপুর ও জিরাট পার হয়ে রওনা হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। মিত্র বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মিস্টার বুফে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর হাকিম। দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দপুর ও রুদ্রনগরের মাঝামাঝি স্থানে নৌকায় চেপে আটজন করে যোদ্ধা মাথাভাঙ্গা নদী পার হয়। এরপর রাত দুইটার দিকে লোকনাথপুর ও পরানপুরের মাঝামাঝি ধাঁপাড়ী ও তালবাগান মাঠে ট্রেন্স (এপিপি) কেটে অবস্থান নেয়। এরপর রাত চারটার দিকে হঠাৎ পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। এরপর তারা বৃষ্টির মতো মটার সেল, এসএমজি, রকেট লান্সার ও রাইফেলের গুলি বর্ষণ শুরু করে। জবাবে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সদস্যরা পাল্টা গুলি বর্ষণ শুরু করে। তিন ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সদস্যরা পাকহানাদার বাহিনীর অ্যাম্বুসে পড়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে একের পর এক গুলি, মটার সেল, রকেট লান্সার, এলএমজি, এসএলার, এসএমজি, এইচএসজি, মার্কফোর রাইফেল ও সেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। খবর পেয়ে ভারতীয় ৩টি যুদ্ধবিমান গো গো আওয়াজে আকাশে চক্কর দিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর এমন রণকৌশল দেখে পাক-হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটতে শুরু করে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই দর্শনা মুক্ত হয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার মাধ্যমে দর্শনাকে সম্পূর্ণরূপে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দর্শনা কেরু চিনিকলের জেনারেল অফিসের সামনে মিত্র বাহিনীর প্রধান মিস্টার বুফে ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান নুর হাকিমের নেতৃত্বে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানো হয়। ৪ ডিসেম্বর দর্শনা ও জীবননগর মুক্ত দিবস হিসেবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতারা আজও এ দিনটি পালন করে আসছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর ....
© All rights reserved © 2019 jagodesh24.com
Design & Developed BY Anamul Rasel