কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় মেয়ের সামনে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূর নাম রহিমা খাতুন (৪৭)। রোববার ভোর ৫টার দিকে কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া ইউনিয়নের বড় মসুয়া গ্রামের মুন্সীপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয় মেয়ে মারিয়া আক্তার (১১)। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক স্বামী রতন মিয়াকে (৫৪) পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের দিগম্বরদী গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে। রতন মিয়া মানসিক রোগী। তিনি একই গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে। নিহত রহিমা খাতুনের বড় ছেলে রেদুয়ান আহম্মেদ যুগান্তরকে জানান, আমার বাবা মানসিক রোগী। আমরা দুই ভাই দুই বোন। খোদেজা আক্তার নামে আমাদের এক বোন বিবাহিত। ষষ্ঠ
শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছোট বোন মারিয়া আক্তার মা-বাবার সঙ্গে বাড়িতে থাকে।
আমি এবং আমার ছোট ভাই মেহেদী হাসান ঢাকায় কোম্পানিতে চাকরি করি। রোববার ভোরে মোবাইল ফোনে জানতে পারি আমার মাকে বাবা দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। সংবাদ পেয়ে আমরা দুই ভাই বাড়িতে চলে আসি।
তিনি আরও জানান, বাড়িতে এসে শুনি মা সেহরির খাবার খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। একই ঘরে থাকা বাবা ঘুমন্ত অবস্থায় মাকে দা দিয়ে কুপিয়ে
মেরে ফেলেছে। মা-বাবার সঙ্গে থাকা ছোট বোন মারিয়া মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে মাকে বাঁচাতে গেলে সেও আহত হয়। গত রাতেও আমি বাবা ও মায়ের সঙ্গে
মোবাইলে কথা বলেছি। তখন বাবা আমার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেননি। আমি জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি বাবা মানসিক রোগী, কিছু দিন ভালো থাকলেও অধিকাংশ সময়ই অসুস্থ থাকেন। নিয়মিতই ওনার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। এলাকায় তিনি রতন পাগলা নামে পরিচিত। আমার মা একজন ধার্মিক নারী ছিলেন। তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্তসহ তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তেন। বাবা ছিলেন তার বিপরীত, তিনি কোনো দিন নামাজ রোজা করতেন না। এ ঘটনায় আহত মারিয়া আক্তার জানায়, আমি মায়ের পাশে ঘুমিয়েছিলাম। মায়ের কান্নায় ঘুম থেকে জেগে দেখি আব্বা মাকে দা দিয়ে কোপাচ্ছে। আমি মাকে বাঁচাতে গেলে আমার হাতেও দায়ের কোপ লাগে। আব্বা মাকে কুপিয়ে মেরে ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আমি এখন কাকে মা ডাকব? আমি কার কাছে থাকব? এই কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) মো. সোনাফর আলী যুগান্তরকে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন
করে নিহত রহিমার মরদেহ কটিয়াদী মডেল থানায় নিয়ে এসেছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। রহিমা খাতুনের হত্যাকারী স্বামী রতন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।