ঘুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, দএরপর জালিমরা বদলে দিল যা তাদের বলা হয়েছিল। তার পরিবর্তে অন্য কথা। এ কারণে যারা জুলুম করল তাদের ওপর নাযিল করলাম আকাশ হতে এক মহাশাস্তি। কারণ, তারা অধর্ম-অন্যায় কাজ করেছিল।দ (আল-কোরআন, ২:৫৯) এ আয়াতে সত্যকে বদলে দেয়ার শাস্তির
উল্লেখ আছে। ঘুষও সত্যকে বদলে দেয়। একজন হকদারের হক বদলে দিয়ে অন্যকে অন্যায়ভাবে দেয়ার কাজে ঘুষ বিচারককে প্রলুব্ধ করে। অতীত জামানায় যারা ঘুষ গ্রহণ করত, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ধর্মের বাণীতে জালিয়াতি করত তাদের সম্পর্কে আল-কোরআনে বলা হয়েছে, দসুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে- এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি তাদের।দ (আল-কোরআন, ২:৭৯) এ আয়াতটি ঘুষ খেয়ে ধর্মের বাণী বদলে দেয়ার কথা বলা হলেও সকল জালিয়াতির জন্যই শাস্তি প্রযোজ্য।
এদিকে ঘুষ সব সময় টাকা-পয়সা না হয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানান বস্তু হলেও এজন্য একই গোনাহ হবে। এ জন্যই হাদিসের ভাষায় এটিকে বলে দরিশওয়াহদ বা দড়ি। দড়ি দিয়ে কূপের ভেতর থেকে বালতি টেনে ওঠানোর মতো ঘুষ অন্যের হক নিজের ঘরে নিয়ে আসে। এজন্য এই প্রক্রিয়ায় তিনটি পক্ষ থাকে। ১. রাশী- যে ঘুষ প্রদান করে, ২. মুরতাশী- যে ঘুষ গ্রহণ করে ৩. রায়েশ- যে অনুঘটক হয়ে কাজ করে। তবে মূলপক্ষ হচ্ছে দুটি। যে ঘুষ দেয় ও যে ঘুষ খায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু দআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে গোশত উদগত হয়েছে দসুহতদ থেকে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই বেশি উপযোগী। একজন
জিজ্ঞেস করল, সুহত কী? তিনি বললেন, বিচার বা শাসনকার্যে ঘুষ গ্রহণ।
হাদিসে বর্ণিত আছে, ঘুষের অর্থে যে নিজে পানাহার করে এবং তার পোষ্যদের পানাহার করায় সবার জন্যই তা গর্হিত। ঘুষ-লালিত দেহের ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। বরং তাদের জন্য লাঞ্ছনা ও আখিরাতে দোজখের আগুন অপেক্ষা করছে। ইহুদিদের দুর্গতির কারণ হিসেবে আল্লাহতায়ালা বলেন, দতারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ (ঘুষ) ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত।দ (আল-কোরআন, ৫:৪২) অপর একটি আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, দহে নবী! আপনি (আহলে কিতাবদের) অনেককেই দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে (ঘুষ খাওয়াতে) তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।দ (আল-কোরআন,
৫:৬২) আয়াতে অবৈধ ভক্ষণদ তরজমা করা হলেও হাদিসে এই দসুহতদ বা অবৈধ আয়কে ঘুষ হিসেবে তাফসির করে দেয়া হয়েছে। তবে সব রকমের দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত আয়ও এর অন্তর্ভুক্ত।
এই ঘুষের বিষয়টি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে স্পষ্টতই এসেছে। বিচারের রায়কে প্রভাবিত করা এবং প্রশাসকদের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে আলাদা করাই যে ঘুষের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তা প্রতিফলিত হয়েছে এই আয়াতে। তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ- সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কর না এবং মানুষের ধন- সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না।দ (আল-কোরআন, ২: ১৮৮) এ আয়াতে দহুক্কামদ অর্থ শাসকগণ, প্রশাসনগণ, বিচারকগণ হতে পারে। আরবি ভাষায় হাকিম বা বহুবচনে হুক্কাম শব্দটি এইসব
অর্থে সমানভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথা বোঝানো হয়েছে যাদের সিদ্ধান্তে একজনের সম্পদে অন্য কেউ অন্যায়ভাবে ভাগ বসাতে পারবে। হাদিসে বর্ণিত আছে, দতোমার রিজিক ধীরগতিতে আসার কারণে তা আল্লাহর নাফরমানির মাধ্যমে চেয়ো না। কারণ তাঁর নিকট যা আছে তা লাভ করতে হলে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমেই করতে হবে। তবে কেউ যদি অন্যের সম্পদ গ্রাস করে তবে তার পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, দযারা ইহুদি ছিল,
তাদের জুলুমের কারণে আমরা তাদের ওপর এমন সব পবিত্র বস্তু হারাম করে দিয়েছি, যা ছিল তাদের জন্য হালাল। এছাড়াও আল্লাহর পথে অনেক বাধা দেয়ার জন্য তা করেছিলাম এবং তারা সুদ গ্রহণের কারণে যা তাদের নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকের ধনসম্পদ গ্রাস করার জন্য। কাফিরদের মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।দ (আল-কোরআন, ৪:১৬০-১৬১) তাই মুসলমান হিসেবে দাবিদার সবারই তওবা করে ঘুষকে পরিত্যাগ করার পাশাপাশি তা প্রদানে বিরুদ্ধাচরণ করা জরুরি। তবে যে ব্যক্তি আখিরাতে সত্যিকার বিশ্বাস করে না সে
কখনো ঘুষ গ্রহণ পরিত্যাগ করতে পারবে না। অথচ দুনিয়াবি জীবন অতি সংক্ষিপ্ত এবং আখিরাতই হচ্ছে অনন্ত। এ সম্পর্কে আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, দবরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ীদ (সুরা আল আদলা: ১৬-১৭ ) এ চেতনা যখন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হবে, তখন সে অবশ্যই ঘুষ গ্রহণ ও ঘুষদানসহ সব ধরনের দুর্নীতি এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকবে।