বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :

চুয়াডাঙ্গার নদীর মাঝখানে সরকারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ

Reporter Name / ৮৭ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন

জাগো দেশ, প্রতিবেদকঃ দীর্ঘ কয়েক যুগ পর চুয়াডাঙ্গার নবগঙ্গা নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। ইতোমধ্যে নদীটির ৩০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। তবে নদী খনন প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বহুতল ভবন। কারণ চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নুর নগর গ্রামে নবগঙ্গা নদীর মধ্যস্থানের দুই একর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে সরকারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন ভবন। এমন বাস্তবতায় নদী খনন প্রক্রিয়া থমকে গেছে গোটা বিষয়টি অবহিত করিয়ে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভবন ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণের চমকপদ্য তথ্য। নবগঙ্গার বুক চিরে গড়ে ওঠা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দুই একর সরকারী জায়গাও কিনতে হয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরকেই। এজন্য স্থানীয় দখলকারীদেরকে দিতে হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলাতে মোট ৫টি নদী রয়েছে। নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা ও কুমার। মূলত পদ্মার শাখা নদী মাথাভাঙ্গা। জেলার বাকি চারটি নদীর উৎস মাথাভাঙ্গা। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দখল দূষণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে মাথাভাঙ্গা। কারণ এক সময়ের খরশ্রোতা মাথাভাঙ্গা নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। আর বাকি চারটি নদী মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এমন বাস্তবতায় জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার নদীগুলো খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গার নদীগুলো খনন করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মেলে ৩৭ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাকে চুয়াডাঙ্গার নবগঙ্গা নদী খনন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে খনন নির্ধারণ করা হবে ১৪ কিলোমিটার। এর ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। গত মাসের ১৪ সেক্টোম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় নবগঙ্গা নদী খননের কাজ। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানান, চুয়াডাঙ্গা শহরের ইসলামপাড়া শ্মশান মোড় থেকে নবগঙ্গা নদীটি খনন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতোমধ্যে নদীটি খনন শেষ হয়েছে ৩০ শতাংশ কিন্তু চুয়াডাঙ্গা- ঝিনাইদাহ সড়কের নুরনগর গ্রামে নদীটির খননকালে থমকে গেছে কাজ। কারণ নদীর মধ্যবর্তী স্থানের দুই একর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অবহিত করানো হয়েছে মন্ত্রণালয়কে। জাহেদুল ইসলাম আরও জানান, পরবর্তী নির্দেশনা পেলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুম আহমেদ জানিয়েছেন এটি নদীর জায়গা কিনা এ বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না। তিনি বলেন, আমরা জানতাম এটি ব্যক্তি মালিকানা জায়গা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জন্য মন্ত্রণালয় জায়গা খুঁজলে নুর নগর গ্রামের এই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন জেলা প্রশাসক স্থানীয় ১১ জনের কাছ থেকে দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দেন। এজন্য অধিদপ্তরকে গুনতে হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া অধিদপ্তরের একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি প্রশিক্ষণ ভবন, একটি অফিসার ও একটি স্টাফ কোয়াটার, ছেলে মেয়েদের জন্য দুটি হোস্টেল এবং দুটি শেড তৈরির নির্মাণ খরচ হয় ২০ কোটি টাকা।
মাসুম আহমেদ জানান, গত কয়েকদিন আগে আমরা জানতে পেরেছি অধিগ্রহণ করা জায়গাটি নাকি নবগঙ্গা নদীর জায়গা। বিষয়টি নিয়ে আমরাও চরমভাবে বিব্রত। গোটা বিষয়টি আমরাও ঢাকাতে অবহিত করিয়েছি। এদিকে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাছে জমি বিক্রি করা ১১ ব্যক্তি জমি তাদের বলেই দাবি করছেন। এদের মধ্যে সালাউদ্দীন মো. মর্তুজা নামে একজন বলেন, এই সম্পত্তি আমার বাপ দাদার। বিভিন্ন রেকর্ড, দলিলপত্র ও আমাদের নামে। সব কাগজপত্র পরীক্ষা করেই আমরা যুব উন্নয়নের কাছে জমি বিক্রি করেছি। আক্তারুজ্জামান মজনু নামে অপর একজন জানান। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই আমরা আদালতের শরানাপন্ন হব। নদীর জায়গা দখল করে সরকারী ভবন গড়ে ওঠায় চরম উদ্বেগ জানিয়েছেন, নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী। তিনি জানিয়েছেন, খবরটি আমাদের জন্য দু:খজনক। সরকার যখন সারাদেশে নদীগুলোতে বাঁচাতে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন, তখন আমাদের জেলাতে নদী দখল করে সরকারী ভবন তৈরি হচ্ছে। এর চাইতে খারাপ খবর কিছুই নেই।
নদীর বুক চিরে সরকারী ভবন এমন খবরে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুজনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহবুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যখন ভবন তৈরির উদ্যোগ গ্রহন শুরু করেছিল তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড কি ঘুমাচ্ছিল। সেই সময় কেন তারা প্রতিরোধ করেনি। এখানে যাদের দেখভালের দায়িত্ব ছিল তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি খুব্র দ্রুত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ভেঙ্গে নবগঙ্গার খনন প্রক্রিয়া চালু করার দাবি জানান। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার জানান, দখলকারীরা যতই শক্তিশালী হোক, এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান খুব শক্ত। নদী দখলকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সুতারং দখলকারীরা কে বা কারা, সরকারী না বেসরকারী তা দেখার কোন সুযোগ নেই। নদী বাঁচাতে কোন দখলকারীকেই ছাড় দেওয়া হবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর