রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর সেখানকার বাসিন্দারা প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তের দিকে যেভাবে ছুটছেন, তা দেখে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চোখে ভাসছে চাঁদপুরের নাসিরকোর্টের ইউক্রেন প্রবাসী জিয়াউদ্দিন আহমেদ কাওসার মামুনের।
তিনি বলেন, ‘বার বার শুধু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মনে পড়ছে। পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর আক্রমণের মুখে সেসময় বাড়িঘর ফেলে ঠিক এভাবেই বাঙালিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মাইলে পর মাইল পথ পায়ে হেঁটে নিরাপদ জায়গায় ছুটছিলেন। পথে পথে তাদেরকে গ্রামের মানুষ খাবার খাইয়েছিলেন। অর্ধশতাব্দি পর ইউক্রেনে আজ একই দৃশ্য।’
জিয়াউদ্দিন আহমেদ কাওসার মামুন কিয়েভ থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পায়ে হেঁটে পোল্যান্ড সীমান্তে রওনা করেন। এসময় পথে পথে তিনি মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলার দৃশ্য নিজ চোখে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে (স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা) বলে জাগোনিউজকে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে (স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়) কিয়েভের বাসা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বের হই। রাস্তায় তখন শত শত গাড়ি। ১৫ মিনিটের পথ পায়ে হেঁটে আসতে তিন ঘণ্টা। অবশেষে রেলস্টেশনে পৌঁছায়। তবে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে প্রথম ট্রেনে উঠতে পারিনি। দ্বিতীয় ট্রেনে উঠতে পারলেও ভেতরে ছিল মানুষে ঠাসা। যুদ্ধাবস্থায় নিরাপদ স্থানে সবাইকে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে ইউক্রেন সরকার ট্রেনের ভাড়া নিচ্ছে না।’
মামুন জানান, ট্রেনযোগে রওনা হওয়ার এক ঘণ্টা পর তারা খবর পান, যে লাইন দিয়ে ট্রেনটি যাচ্ছে সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে তাদেরকে কয়েকশো মাইল ঘুরে পোল্যান্ডের কাছাকাছি স্টেশনে পৌঁছাতে হয়। স্টেশনে নামার পর সেখান থেকে পোল্যাণ্ডের সীমান্ত পথের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। পথ খুব বেশি না হলেও রাস্তায় শত শত যানবাহনের দীর্ঘ সারি থাকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পায়ে হেঁটে রওনা করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, রাস্তায় কয়েক দফা বিশ্রাম নিয়ে এ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। এখনো আট কিলোমিটার হাঁটতে হবে। পথে পথে মানুষের জন্য খাবার ও পানি বিতরণ করছেন ইউক্রেনের নাগরিকরা।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মামুন বলেন, তখন বয়স খুব বড়জোর ৮/১০ বছর। ওই সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালানো মানুষদের যেভাবে গ্রামে গ্রামে মানুষ খাবার-পানি দিয়ে সাহায্য করতেন, ইউক্রেনে তেমনটি দেখছি।’
এদিকে, ইউক্রেনের চেরকাছির বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুক্রবার সকালে সপরিবারে পোলান্ড সীমান্তে রওনা হওয়ার কথা ছিল তার। একজন বন্ধুর গাড়িও ঠিক করেছিলেন। ওই সময় সাইরেন বাজিয়ে সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাঙ্কারে আশ্রয় নেন।
শনিবার ভেলা ১১টায় (স্থানীয় সময় সকাল ৭টা) গাড়িযোগে রওনা হন। পথিমধ্যে বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পেট্রলপাম্পসহ নানা ধ্বংসযজ্ঞ দেখেন। রাত সাড়ে ৯টায় তিনি বলেন, ‘রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ির কারণে এক ঘণ্টার পথ যেতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। আপাতত পোলান্ড সীমান্তের কাছাকাছি নিরাপদ অবস্থায় আছি