শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

জুমআর দিনের ইবাদত ও বিশেষ আমল

Reporter Name / ৬৮ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

হযতর মাওলানা মুফতি বনি ইয়ামিনঃ সপ্তাহের সেরা দিন ইয়াওমুল জুমআ। এ দিন সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে- ’মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ এ দিন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করতে মহল্লার মসজিদে একই কাতারে শামিল হয়। যার ফলশ্রুতিতে সবার মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সেতুবন্ধন। এ দিন মুমিন মুসলমানের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত দিন। এ দিনের রয়েছে বিশেষ আমল। শুধুমাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই এ দিনকে আল্লাহ তাআলার দেয়া সেরা উপহার সাপ্তাহিক ইবাদাত-বন্দেগির জন্য ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমরা পৃথিবীতে সর্বশেষ আগমণকারীরাই কেয়ামাতের দিন অগ্রগামী থাকব। পার্থক্য হলো এই যে, তাদেরকে (পূর্ববর্তীদেরকে) আমাদের পূর্বে (আল্লাহর) কিতাব দান করা হয়েছে; আর আমাদেরকে (কিতাব) দান করা হয়েছে তাদের পরে। অতপর তাদের ওপর এ দিনটি অর্থাৎ জুমআর দিনটি (ইবাদাতের জন্য) ফরজ করা হয়েছিল অর্থাৎ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা (আহলে কিতাবের অনুসারীরা) এ দিনটির ব্যাপারে মতভেদ করল। আর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করলেন, ফলে এ ব্যাপারে অন্যান্য লোকেরা আমাদের পিছনে থাকলো। ইয়াহুদিগণ পরের দিন (শনিবার)কে এবং নাসারাগণ তার পরের দিন (রোববার)কে গ্রহণ করল। (বুখারি ও মুসলিম) অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমরাই সর্বশেষ আগমনকারী এবং কিয়ামাতের দিন আমরাই প্রথম। যাদের জন্য (হিসাব-কিতাব ও জান্নাতে প্রবেশের) আদেশ সমস্ত সৃষ্টির পূর্বে দেয়া হবে। (মুসলিম) এ দিনের ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন- ’হে ঈমানদারগণ! জুমআর দিন নামাজের জন্য যখন তোমাদের আহ্বান করা হয়; তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর। ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ‘অতপর যখন নামাজ শেষ হয়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা (উত্তম রিজিক ও নেয়ামত লাভে) সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)

এ দিনের আমল

জুমআর দিনের অনন্য আমল হলো- এ দিনের একটি আমলেই মিলবে হাজার বছরের নামাজ-রোজার সাওয়াব। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন ৫টি কাজ করার মাধ্যমে ১টি আমল করবে। অর্থাৎ জামআর নামাজ পড়তে আসবে। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির মসজিদে আসার প্রতি কদমে (পদক্ষেপে) ১ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সাওয়াব দান করবেন। (সুবহানাল্লাহ!)

কাজ ৫টি হলো-

– জুমআর দিন গোসল করা। – আগে আগে মসজিদে আসা। – পায়ে হেঁটে মসজিদ আসা। – ইমামের কাছাকাছি বসা। এবং – মনোযোগ দিয়ে খোতবা শোনা।

ধরা যাক-

কোনো ব্যক্তির বাড়ি থেকে মসজিদে আসতে ১০০ কদম হাটা লাগে। ওই ব্যক্তি যদি উল্লেখিত ৫ কাজ মেনে জুমআর দিন আমল করে তবে তার আমল নামায় ১০০ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সাওয়াব যোগ হবে। হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে- জুমআর দিনের এ আমলের সুযোগের চেয়ে বেশি আমলের সুযোগ লাভের আর কোনো দ্বিতীয় মাধ্যম নেই। বিখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব বলেন, ‘আমার কাছে নফল হজ করার চেয়ে বেশি উত্তম শুক্রবারের আমল করা।’

মুসলিম উম্মাহর জন্য নসিহত হলো-

জুমআর দিন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে মুসলমানগণ যথাযথ ধর্মীয় ভাব- গাম্ভীর্যের মাধ্যমে এ দিনটিকে ইবাদাত- বন্দেগির দিন হিসেবে পালন করে থাকে। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র তার ইবাদাত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এ মহত্বের প্রতি দৃষ্টি রেখেই আল্লাহ তাআলা ইবাদাত-বন্দেগির সাপ্তাহিক অনুশীলনের জন্যই জুমআর দিনটিকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দিনের হক আদায়ে আজানের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সহিত নামাজ আদায়ে মসজিদ পানে ছুটে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। ইবাদাত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত নিজেদেরকে আল্লাহ বন্দেগিতে নিযুক্ত রাখতে নিজেদেরকে সেভাবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর