ফাইল: ফটো
ধর্ম ও জীবন, বনি ইয়ামিন, জাগো দেশ প্রতিবেদকঃ ইতিকাফ এমন এক ইবাদত, যাতে বান্দা নিজেকে মসজিদে সীমাবদ্ধ রেখে নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে ব্যাপৃত থেকে আল্লাহর রেজামন্দি হাসিলের জন্য আত্মনিবেদনে মগ্ন থাকেন। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে একদিন ইতেকাফ করবে তার মাঝে আর জাহান্নামের
মাঝে তিন খন্দক (এক খন্দক` সমান আসমান-জমিনের দূরত্ব পরিমাণ) দূরত্ব হয়ে যায়। আততিবরানি ও আল বায়হাকি। আল-কুরআনুল কারিমে বিভিন্নভাবে ইতেকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, ইবরাহিম (আ) ও ইসমাইল (আ)-এর কথা
উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে- এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সাজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। ( সূরা বাকারা : ১২৫) ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সঙ্গে কী আচরণ হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা মসজিদে ইতেকাফকালে স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করো না। ( সূরা বাকারা : ১৮৭) রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর অসংখ্য হাদিস ইতেকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষের দশকে ইতেকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতেকাফ করেছেন। (বুখারি ও মুসলিম) অন্য এক হাদিসে এসেছে, আমি (প্রথমে) এ রাতের (শবে কদর) সন্ধানে প্রথম দশে ইতেকাফ পালন করি। অতঃপর ইতেকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) ইতেকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সঙ্গে ইতেকাফ পালন করল। রাসূল বলেন, আমাকে তা (শবে কদর) এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সাজদা দিচ্ছি। অতঃপর রাসূল একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর
আদায়ের জন্য দন্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এলো এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) প্রতি রমজানে দশ দিন ইতেফাক করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি বিশ দিন ইতেকাফে কাটান। ইতেকাফের উপকারিতা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ইতেকাফকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে।
তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে ও নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে। ইতেকাফের ফলে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং আল্লাহ তায়ালার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। [সুরা আজ-জারিয়াত: ৫৬]। আর এ ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে ইতেকাফ অবস্থায়। কেননা ইতেকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালাও তাঁর বান্দাদের নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদের নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন: বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা যুমার : ৫৩] হাদিসে এসেছে, মসজিদে ইতেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে নেয়ার কারণে মুসলমানের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে ইতেকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে ইতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়।
ফাইল: ফটো