কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ স্কুলে আনা নেয়ার পথে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক অবশেষে সেটি রূপ নিলো বিয়েতে। গত ১০ মে তাদের কুমিল্লা শহরে বিয়ে হয়। তবে প্রশ্ন উঠেছে বরের বয়স প্রায় ৬৫ আর কনের ১৪ নিয়ে। বর পেশায় রিকশাচালক ও ছয় সন্তানের জনক এবং কনে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তারা দূর সম্পর্কের নানা-নাতনি। অসম বিয়ের বিষয়টি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল
হয়েছে। কনের বাবা দাবি করেছেন, প্রলোভন দেখিয়ে তার মেয়েকে কৌশলে বিয়ে করেছেন রিকশাচালক শামছুল হক শামু। বিয়ে প্রসঙ্গে শামছুল হক শামু জানান, মরিয়ম আক্তার সম্পর্কে আমার নাতনি। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তাদের বিপদে আপদে আমি সব সময় পাশে ছিলাম। তাকে স্কুলে আনা নেয়ার পথে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি আরো জানান, আমার বউ অপারেশনের রোগী। সংসারে কাজ করতে পারে না তাই বিয়ে করেছি। তাছাড়া আমাদের দুইজনের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহর ও এক লাখ টাকা উসুলে তাকে আমি বিয়ে করেছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউপির পশ্চিম পেরুল গ্রামের ইমাম হোসেন ঢাকায় চাকরি করায় গ্রামে বসবাস করা তার পরিবারের দেখাশুনা করতেন পেরুলদীঘিরপাড়ার রিকশাচালক সামছুল হক। তার দ্বিতীয় মেয়ে মরিয়ম
আক্তার স্থানীয় পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সামছুল হক নিজ রিকশায় তাকে নিয়মিত স্কুলে আনা নেয়া করতেন। কাজের কারণে মাঝে মধ্যে তিনি ওই বাড়িতে রাত্রিযাপনও করতেন।
এ নিয়ে স্থানীয়রা আপত্তি করলে তিনি প্রাপ্ত বয়স হলে ওই মেয়ের সঙ্গে নিজের ছেলে মনিরের বিয়ে দেয়ার কথা এলাকায় প্রচার করেন। কিন্তু গত ১০ মে রোববার সামছুল হক ওই ছাত্রীকে নিয়ে উধাও হয়ে যান। এ নিয়ে স্থানীয়দের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ১১ মে পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান লোক মারফত সামছুল হক ও ছাত্রীকে ইউপি কার্যালয়ে হাজির করে বিস্তারিত জানতে চান। এ সময় সামছুল হক ছাত্রীর প্রাথমিক শিক্ষা সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ ও বিয়ের কাবিননামা উপস্থাপন করেন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সনদ ও জন্মনিবন্ধনে মরিয়মের জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে ০২/০২/২০০২ ইং। ২০০৮ সালে জন্মনিবন্ধনের সময় পরিবারের পক্ষে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সামছুল হকের বিরুদ্ধে। কাবিন নামায় দেখা যায়, গত ১০ মে কুমিল্লা সিটি কর্পোশেনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান সরকারের কার্যালয়ে পাঁচ লাখ টাকা মোহরানায় বই নম্বর ৫৪, পৃষ্ঠা নম্বর ২৮ ও ক্রমিক নম্বর ৪৪০-এ তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। কাবিনামায় সামছুল হকের জন্মতারিখ ০৩/০/১৯৫৫ ইং উল্লেখ রয়েছে। লালমাই উপজেলা পেরুল দক্ষিণ ইউপি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম বলেন, জন্ম
সনদে বয়স বাড়িয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে ৬৫ বছরের ওই বৃদ্ধ ১৪ বছরের কিশোরীকে পালিয়ে বিয়ে করেছেন। পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান এজিএম শফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি উভয়কে আমার অফিসে ডাকি। বরের বয়স ৬৫ বছর। কনের ১৮ বছর হয়নি। তবে তাদের উপস্থাপন করা জন্মনিবন্ধন ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী কনে প্রাপ্ত বয়ষ্ক। কনেকে বার বার অনুরোধ করলেও সে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে ১৩ মে বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু বলেনি। আমি ফেসবুকে দেখে নিজ উদ্যোগে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি মেয়ের বয়স ১৮ বছর। এখন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে যদি কাউকে বিয়ে করে তাহলে আমরা কি করতে পারি। বাল্যবিয়ে দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে স্থানীয়রা আগে জানালে একটা ব্যবস্থা নেয়া যেতো। লালমাই ইউএনও কেএম ইয়াসির আরাফাত বলেন, বিষয়টি আমি শোনা মাত্রই স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেছি খোঁজ নেবার জন্য। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, মেয়ে নাকি জন্মনিবন্ধন ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক।