ইউনুছ আলী আনন্দ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ অত্যাধুনিক মিল কল-কারখানার অটো মেশিনের প্রযুক্তিতে তৈরি সেমাই সর্বত্র ব্যবহার হলেও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চেয়ারম্যান পাড়ার সেই পুরনো দিনের হাত মেশিনের
সেমাইয়ের কদর আজো কমেনি। পবিত্র রমজান মাস আসলে ফুলবাড়ী উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে দেখা যেত দুইটি আনন্দ। একটি ছিল রোজা রাখা, অন্যটি ছিল ঈদুল ফিতর পালনে হাত মেশিনে সেমাই তৈরির ধুম। গ্রাম- গঞ্জের নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবেই পুরো রমজান জুড়ে ব্যস্ত সময় পার করতো সেমাই তৈরিতে।
ময়দা ও পানি দিয়ে তৈরি করা হতো হাত মেশিনের সেমাই। পুরুষ হাত দিয়ে ঘুরাতো হাত মেশিনের হাতল। আর নারী সেই মেশিনের মুখে আঙুল দিয়ে ঠেসে দিত ময়দা। হাত মেশিনের ঘুরানো হাতলের চাপে ছোট ছোট জালি দিয়ে
বের হতো সেমাই। এগুলো রোদে শুকিয়ে তৈরি হতো সেমাই। এই সেমাই
দিয়েই পালিত হতো ঘরে ঘরে ঈদুল ফিতর উৎসব। কিন্তু এখন উন্নত প্রযুত্তিতে লাচ্ছাসহ বিভিন্ন মেশিনজাতকৃত সেমাই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় আজ আর ফুলবাড়ীতে চোখে পড়ছেনা হাত মেশিনের সেমাই। তবে ফুলবাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান পাড়ায় প্রতি রমজান মাসেই কোনো না কোনো পরিবারে হাত মেশিনের তৈরি সেমাইয়ের তৈরি করতে দেখা যায়। এবারো চেয়ারম্যান পাড়ায় হাতেগুনা দুই একটি বাড়িতে হাত মেশিনের সেমাই তৈরি করতে দেখা গেছে। প্রতি ঈদুল ফিতর ঈদে এখানকার পরিবারগুলো বাজার থেকে কেনা লাচ্ছা, সেমাইয়ে ঈদ উদযাপন করার পাশাপাশি পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে হাত মেশিনে সেমাই তৈরি করে থাকেন। হাত মেশিনের তৈরি সেমাই বাজারের সেমাইয়ের চেয়ে সু- স্বাদু। দুধ দিয়ে এ সেমাই রান্না করলে হাত মেশিনের সেমাই খুবই সু-স্বাদু হয়। বাজারের সেমাইয়ে ক্ষতিকর জিনিস থাকে। কিন্তু ময়দা-পানির তৈরি হাত মেশিনের সেমাইয়ে কোনো ক্ষতিকর জিনিস নেই। তাই এখানকার হাত মেশিনের সেমাইয়ের কদর রয়েছে।
এবার চেয়ারম্যান পাড়ায় দেখা গেছে, গৃহিণী জোসনা বেগম,বৃদ্ধা মেহরন বিবি, যুবক মাইদুল ইসলাম, অমিত হাসান হাত মেশিনে সেমাই তৈরি ব্যস্ত সময় পার করছেন। তৈরি সেমাই রোদে শুকানো হচ্ছে। যুবক মাইদুল ইসলাম বলেন, বাজার থেকে যত দামি সেমাই বা লাচ্ছা কিনে আনা হোক না কেন হাত মেশিনের ময়দা দিয়ে তৈরির সেমাইয়ের মতো স্বাদ হবে না। এবার ময়দা দিয়ে তৈরি হাত
মেশিনের সেমাই তিনি নিজে খাবারের জন্য রেখে একমাত্র মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। বৃদ্ধা মেহরন বিবি বলেন, প্রতি রমজানের ঈদে হাত মেশিনের তৈরি সেমাই তৈরিতে এলাকাবাসীকে সাহায্য করি। এবারো ছেলে, নাতি, নাতনি ও নাতি বউদের সেমাই তৈরিতে সহযোগিতা করছি। হাত মেশিনের সেমাই তৈরিতে আনন্দ পাই। যুবক অমিত হাসান বলেন, হাত মেশিনের সেমাই অনেক ভালো লাগে। এই সেমাই খেলে পেটের কোনো সমস্যা হয় না। তাই রমজান মাস থেকে হাত মেশিনের সেমাই তৈরিতে মেশিনের হাতল হাত দিয়ে ঘুরানোর সহযোগিতা করছি।